আদা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আদা খাওয়ার উপকারিতা আমরা প্রায় সকলেই জানি। আদা আমাদের রান্নার কাজে বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়। এটিকে শুধু মসলা বললে ভুল হবে এটি অনেক ঔষধি গুণ আছে। বিশেষ করে করোনার সময় আদা সম্পর্কে আমরা আরো ভালো করে জানতে পেরেছি। করোনার সময় এমন মানুষ হয়তো পাওয়াই যাবে না যারা আদা খায়নি।
হাজার হাজার বছর ধরে আয়ুর্বেদিক ও ইউনানী ওষুধ তৈরি করতে আদা বিশেষ গুরুত্ব রাখে। আমরা সকলেই একটু ঠান্ডা লাগলেই আদা চা খেয়ে থাকি। বা গলা খুসখুস করলে মুখে একটু আদা দিয়ে রাখি কারন আমরা খুব ভালো করে জানি আদা ঠান্ডা কমাতে এবং গলা খুশকুস কমাতে কাজ করে অনেক কাজ করে।
আদার উপকারিতা
- কাশি ও ঠান্ডা লাগার জন্য আদা
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে আদা
- চুল ও ত্বকের জন্য আদা
- মহিলাদের উপকারে আদা
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আদা
- কোলেস্টেরলের জন্য আদা
- ওজন কমাতে সাহায্য করে
- বাতের জন্য আদা
- জীবাণু বিরোধী হিসেবে
ওপরের গুণগুলো ছাড়াও এমন হাজার হাজার রোগের ঔষধ হিসেবে আদা ব্যবহার করা যায় হয়তো আমরা তা জানি না। চলুন জেনে নিই বিস্তারিত এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কিভাবে আদা আমাদের উপকার দেয়।
কাশি ও ঠান্ডা লাগার জন্য আদা
ঠান্ডা কাশি লাগলেই আমরা সচরাচর আদা খেয়ে থাকি। কারণ আদার এমন অনেক গুণ আছে যা ঠান্ডা কাশি কমাতে সাহায্য করে। শরীরে আদা পিত্ত বাড়িয়ে দেয় যার কারণে কাশি এবং ঠান্ডা লাগা খুব তাড়াতাড়ি সেরে যায়। এছাড়াও শ্বাসকষ্ট হলে আমরা আদা খেতে পারি। তবে পরিমাণে খুব বেশি খেয়ে ফেলবো না অল্প অল্প খেতে হবে। আমরা চায়ের সঙ্গেও আদা খেতে পারি প্রতিদিন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে আদা
আমাদের শরীরে যখন সঠিকভাবে শর্করা পরিপাক করতে পারে না তখন আদার প্রয়োজন পড়ে। শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা কম থাকে তখন মিলিটার্স নামের এক হরমোন ব্যাধি শরীরে বাসা বাঁধে। ডায়াবেটিস মিলিটার কমাতে আদা বিশেষ গুরুত্ব রাখে। এটা পরীক্ষিত যে প্রতিদিন দুই গ্রাম করে আদার পাউডার ডায়াবেটিস রোগীদের খেতে দেওয়া হয় ১২ সপ্তাহের মত। বারো সপ্তাহ খাওয়ার পরে পরীক্ষা করে পাওয়া গেছে আদা শরীরে শর্করাকমাতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সবকিছু খেতে হবে।
চুল ও ত্বকের জন্য আদা
আদাতে এমন কিছু গুণাবলী আছে যার কারণে চুল এবং ত্বকের সুন্দর করতে সাহায্য করে। আমাদের মাথায় খুশির প্রভাব কমাতে আদার রস ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। আদার ব্যবহারে চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম মত খনিজ থাকে আদতে। তাই আমাদের মাথার ফাঁকা অংশগুলোতে চুল গজাতে এবং ত্বক সুন্দর রাখতে সাহায্য করে।
মহিলাদের উপকারে আদা
ঋতুস্রাবের তিনদিন আগে থেকে এবং ঋতুস্রাব হওয়ার দুইদিন পর্যন্ত নিয়মিত যদি আদা খাওয়া যায় তাহলে যাদের ঋতুস্রাবের সময় অনেক ব্যথা হয় তা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। অনেক সময় অতিরিক্ত রক্ত প্রবাহ দেখা দেয় ঋতুস্রাবের সময় সে ক্ষেত্রে আমরা আদা খেলে অনেক উপকার পাব।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আদা
আয়ুর্বেদিক ঔষধ হিসেবে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আমরা আদা ব্যবহার করতে পারি। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আদা ব্যবহার করার একটি নিয়ম আছে তা হল ব্যক্তিবেদে ওজন মেপে আদা খেতে হয়। সেক্ষেত্রে আমাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আদা খেতে হবে।
কোলেস্ট্রলের জন্য আদা
শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে আদা বিশেষ ভূমিকা রাখে। রাতে এন্টিঅক্সিডেন্ট যে বৈশিষ্ট্য আছে সেটি আমাদের শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতেও সাহায্য করে এটি গবেষণা করে প্রমাণিত হয়েছে।
জীবাণু বিরোধী আদা
সব ধরনের জীবাণু নষ্ট করতে আদা বিশেষভাবে কাজ করে। আদার নির্যাস বা আদার পেস্ট জীবাণু বিরোধী ঔষধ হিসেবেও আমরা ব্যবহার করতে পারি। খাবার থেকে জন্ম নেওয়া ব্যাকটেরিয়া কে নষ্ট করতে আদার নির্যাস বা আধার পেস্ট এর অনেক গুরুত্ব। আমরা প্রতিদিনই সকালে কিছু পরিমাণ আদার রস খেতে পারি এর ফলে শরীরের জীবাণু অনেক ধ্বংস হবে।
বাতের জন্য আদা
বাতের রোগের জন্য যে ধরনের ওষুধ আমরা আয়ুর্বেদিক খেয়ে থাকি সে ধরনের ওষুধ আসলে আদা দিয়েই তৈরি করা হয়ে থাকে। গাট ফুলে যাওয়া বাদ এবং হাড়ের বাঁধ এ ধরনের বাতির জন্য আদার গুরুত্ব অনেক। আগের যুগের মানুষ বাতের ঔষধ হিসেবে আদাই ব্যবহার করে থাকতো।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
আদা শরীরের লিপিডের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। আদায় এবং আদার জল ওজন কমাতে বিশেষভাবে কাজ করে থাকে। শরীরে বিভিন্ন জায়গায় চর্বিগুলোকে গুলিয়ে ফেলতে সাহায্য করে এবং ভর কমায়।যাদের অতিরিক্ত ওজন বেশি তারা প্রতিদিন আদা খাওয়ার অভ্যাস করব এটা শরীর থেকে অতিরিক্ত চর্বি ঝরিয়ে ফেলতে সাহায্য করবে।
আদা খাওয়ার অপকারিতা
- আদা খেলে হতে পারে রক্তক্ষরণের কারণ।
- অতিরিক্ত আদা খেলে ডায়রিয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- অতিরিক্ত আদা খেলে হৃদ যন্ত্রের অতি বেড়ে যেতে পারে এবং দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা ও ঘুম না হতে পারে।
- অতিরিক্ত আদা খাওয়ার ফলে ঠোঁট ফুলে যেতে পারে।
- গর্ভবতী মায়েদের জন্য প্রথম কয়েক মাস আদা খেলেও শেষের দিকে একদমই আদা খাওয়া যাবেনা।
- কোন ধরনের ওষুধ চলাকালীন আদা খেতে হলে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে খেতে হবে।
- আদা বেশি খেলে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ বেশি কমে যেতে পারে।
লেখক এর মন্তব্য
আদা এমন এক ঔষধি যা আমাদের অনেক ধরনের রোগ নিরাময় করতে সহায়তা করে। তবে কোন কিছুই যেমন বেশি খাওয়া ভালো নয় তেমনি আদাও। প্রতিদিন বেশ কয়েকবার আদা চা খাওয়া উচিত নয় এতে করে ঘুম না হতে পারে। প্রতিদিন সামান্য পরিমাণে আদা খাওয়ার অভ্যাস করাটা খুব ভালো। আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের যদি কোন উপকার হয় তাহলে আমার পেজটি ঘুরে দেখবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url