জবা পাতা ও ফুলের উপকারিতা



ফুলের দিকে তাকালেই মন ভালো হয়ে যায়, এমন মানুষ পাওয়াই যাবে না যে ফুল পছন্দ করে না। আমাদের দেশে এখন নানা ধরনের জবা ফুল হয়ে থাকে। জবাব ফুলের অনেক ঔষধি গুন আছে। আমরা হয়তো জানি না যে আমাদের পাশে যে জবার গাছটি হয়ে আছে তাতে কি ধরনের গুন আছে।
জবার উপকারিতা
 জবা ফুল এখন নানা রঙের হয় সাদা, লাল, গোলাপি ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে ঔষধি গুণ বেশি হলো লাল জবাতে। আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবেও জবার পাতা জবার ফুল জবা গাছের ছাল আমরা ব্যবহার করে থাকি।

ভূমিকা

আমাদের আশেপাশে এমন অনেক ধরনের জিনিস রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে আমরা ভালোভাবে জানিনা কিন্তু সেগুলো আমাদের সুস্থ থাকতে সহায়তা করে। জবা গাছও এমন একটি গাছ যা আমাদের দুরারোগ্য রোগ থেকে বাঁচাতে পারে। জ্বর এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে জবার পাতার জুড়ে নেই। আজ আমরা জেনে নিই জবা গাছ থেকে কি কি উপকার পেতে পারি।

জবার পাতার উপকারিতা

অসাধারণভাবে জবার পাতা আমাদের উপকার করে। জবার পাতায় রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট এ খনিজ এবং ভিটামিনের পরিপূর্ণ। ক্যালসিয়াম আয়রন এবং পটাশিয়াম এর মত খনিজ উপাদানও জবার পাতায় রয়েছে। যা আমাদের শরীরের বিভিন্নভাবে কাজ করে। জবাই পাতায় যে ভিটামিন সি রয়েছে সেটা আমাদের শরীরের দারুন ভাবে কাজ করে।

জবা পাতার ঔষধি গুণাবলী

  • ব্যথা কমাতে সাহায্য করে
জবা পাতা সব ধরনের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।, প্রদাহ বিদ্রোহী বৈশিষ্ট্য রয়েছে জবা পাতায়। এই পাতার ব্যবহারে ব্যথা এবং খোলা যেকোনো ধরনের জয়েন্টের ব্যথা সারাতে সাহায্য করে এবং জয়েন্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
  • এন্টি অক্সিডেন্ট এর উৎস
জবা পাতা মূলত এন্টি অক্সিডেন্ট এর সামগ্রীর জন্য বিখ্যাত। অনেক ধরনের রোগ যা আমাদের শরীরে দীর্ঘদিন যাবত বাসা বেধে আছে যেটা অক্সিডেটিভ স্ট্রোকের মতো হতে পারে। আমাদের জবা পাতাগুলি শরীরের অক্সিডেন্ট স্ট্রোকের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে যার ফলে দীর্ঘদিন যাবত শরীরে যে ধরনের রোগ বাসা বেধে থাকে সেগুলো ছাড়তে শুরু করে।
  • ওজন কমাতে সাহায্য করে
এখন প্রায় সব খাবার এই মেডিসিন যুক্ত থাকে। তাই আমাদের শরীর খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায় ওজন বেড়ে যায়। ওজন কমাতে সাহায্য করে জবা পাতার রস। আমরা প্রতিদিন কয়েকটা করে জবা পাতা তুলে ভালো করে ধুয়ে সেটা রস বানিয়ে খেতে পারি। এটা করলে আমাদের শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
  • চর্বি কমাতে সাহায্য করে
অতিরিক্ত চর্বি কমাতেও সাহায্য করে জবা পাতার রস। যাদের শরীরের অতিরিক্ত চর্বি তারা প্রতিদিনকয়েকটা করে জবা পাতার রস খাবেন।

জবা ফুলে রোগ নিরাময়

  • ডায়াবেটিকস নিরাময়ে কাজ করে
আমরা বিভিন্ন তথ্য থেকে জানতে পারি জবা ফুল থেকে ইনসুলিন পুনরুদ্ধর করতে পারা যায়। এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। জবা ফুলে থাকে ফেরুলিক এসিড এটিকে পলিফেনস ও বলা যায়। এই ফেরেলিক এসিড আমাদের ডায়াবেটিসের প্রতিনিধিও বলতে পারেন।
  • জ্বর নিয়ন্ত্রণ করে
জবা ফুলের চা আমাদের জ্বরের ঔষধ হিসাবে কাজ করে। জ্বর হলে আমরা যদি জবা ফুল বেশ কিছুক্ষণ ফুটিয়ে সেটা চা করে খায় তাহলে শরীরের জন্য খুবই উপকার এবং জ্বর কমাতে সাহায্য করে।
  • অতিরিক্ত ঋতুস্রাবে
অতিরিক্ত ঋতুস্রাবের সমস্যা সমাধান করতে পঞ্চমুখী জবার গুরুত্ব অনেক। যাদের অতিরিক্ত ঋতুস্রাবের সমস্যা আছে তারা চার-পাঁচটি পঞ্চমুখী জবা ভেজে খেলে অনেক উপকার দেয়। কিম্বা পঞ্চমুখী জবা বেটে কিছু সঙ্গে মিশিয়ে খেলেও ঋতুস্রাব স্বাভাবিক করে।
  • অনিয়মিত স্রাবে
মেয়েদের অনিয়মিত ঋতুস্রাবে পঞ্চমুখী জবার গুরুত্ব অনেক। অনেকেরই ঠিকমতো মাসিক হয় না। কিংবা দেখা দিচ্ছে এক থেকে দেড় দিন থাকার পর বন্ধ হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে পঞ্চমুখী জবা আমরা খেতে পারি। পঞ্চমুখী জবার সঙ্গে কিছুটা দারুচিনি মিশিয়ে মিহি করে বেটে ওই সময় ঔষুধের মত নিয়মিত খেলে মেয়েদের স্রাব স্বাভাবিক ভাবে হবে।

চুল ও ত্বকের যত্নে জবার গুরুত্ব

  • চুলের বৃদ্ধির জন্য
জবা ফুলো পাতার কোন তুলনায় হয়না চুলের উপকারে। জবা পাতা বেটে আমরা যদি জলপাইয়ের তেলের সঙ্গে মিশিয়ে বেশ কিছুক্ষন ফুটানোর পরে ঠান্ডা করে একটি শিশিতে ঢেলে রেখে সেটা ব্যবহার করি তাহলে আমাদের চুলের বৃদ্ধি ঘটবে তরতরিয়ে। বাড়িতেই এ ধরনের তেল তৈরি করে যদি আমরা চুলে লাগাই তাহলে চুল সহজে পাকবেও না তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি হবে।
  • রুক্ষ চুল সতেজ করতে
জবা ফুলের কয়েকটি পাত্রী আমরা ভালোভাবে ধুয়ে সেটা বেটে নিব এবং নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে গোসল করার এক থেকে দুই ঘন্টা আগে চুলে দিয়ে রাখবো এবং গোসল করার সময় শ্যাম্পু করে নিব। বেশ কিছুদিন এটা করলেই আমাদের চুল সতেজ হয়ে যাবে।
  • খুকশী দূর করতে
তিলের তেলের সঙ্গে জবা ফুলের পাপড়ি মিশিয়ে চুলে দিলে খু্কশী থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। গোসল করার ৩০ থেকে ৪০ মিনিট আগে চুলে মাখিয়ে রেখে গোসল করার সময় শ্যাম্পু করে নিব কিছুদিনের মধ্যেই খুকশী দূর হয়ে যাবে।
  • চুল পড়া কমাতে
আমরা অনেকেই জানি চুল পড়া কমাতে জবা ফুলের গুরুত্ব অনেক। জবা ফুলের পাপড়ি যদি অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে মাখিয়ে গোসল করার বেশ কিছুক্ষণ আগে মাথায় লাগিয়ে রাখানো যায় তারপরে শ্যাম্পু করে ফেলা যায় কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের চুল পড়া কমে যাবে।
  • পাকা চুল রোধ করে
আমাদের অনেকেরই খুব কম বয়সেই চুল পেকে যায় এক্ষেত্রে আমরা জবা ফুলের পাপড়ি ও পাতা ব্যবহার করতে পারি। জবা ফুলের বেশ কিছু পাপড়ি ও পাতা বেশ কিছুক্ষন জলের মধ্যে ভালোভাবে ফুটিয়ে জলটা যখন লালচে হয়ে যাবে তারপর ঠান্ডা করে একটি স্প্রের বোতলে তুলে রাখুন। এবং প্রতিদিন গোসল করার আধা ঘন্টা আগে চুলে স্প্রে করুন তারপর শ্যাম্পু করে ফেলুন। কিছুদিনের মধ্যে আপনার পাকা চুলগুলি কালো হতে শুরু করবে।
  • ত্বকের যত্নে জবা
আমরা বেশ কিছু জবার পাপড়ি শুকিয়ে বেটে একটি পাত্রে রেখে দিতে পারি। এবং কিছু পরিমাণ দুধের সঙ্গে এই পাপড়ি বাটা মিশিয়ে যদি ফেসপ্যাক হিসেবে মুখে লাগায় তাহলে অনেক উপকার পাব। আমাদের ত্বক উজ্জ্বল করবে এবং টানটান রাখতে হয় সহায়তা করবে।

উপসংহার

জবা গাছের প্রত্যেকটি অংশই আমাদের কাজে লাগে আমার মতে বাজারে বিভিন্ন ধরনের জবার তেল বা ফেসপ্যাক পাওয়া যায় আমরা সেগুলি ব্যবহার না করে বাড়ির আশেপাশে থেকে জবাপাতা বা জবা ফুল সংগ্রহ করে বাড়িতেই প্রাকৃতিকভাবে ব্যবহার করব সেক্ষেত্রে বেশি উপকার পেতে পারি। কারণ বাজারের এ ধরনের জিনিসগুলোতে জবা পাতা বা ফুলের সঙ্গে কেমিক্যালও মিশ করে থাকে।

 আমরা সুস্থ থাকতে জবা পাতার রস খেতে পারি এবং প্রতিদিন জবা পাতার চা খেতে পারি এতে আমাদের শরীরের অনেক ধরনের রোগ দূর করবে এবং যেসব রোগ বাসা বেধে আছে সেগুলো কমাতে সাহায্য করবে আমার আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগে থাকলে আমার পেজটি ঘুরে দেখতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url