ডায়াবেটিস রোগীর খাবারের তালিকা
বিশ্বে প্রতিনিয়ত ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। নিজেকে ভালো থাকতে হলে অবশ্যই খাবারের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে সর্বপ্রথম কাজ হচ্ছে খাদ্যাভ্যাস। খাদ্যাভাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে আমাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো থাকতে সাহায্য করবে।
এক সময় দেখা যাবে ডায়াবেটিস মহামারী রোগের রূপান্তরিত হয়েছে। তবে আমরা যদি সব দিকে খেয়াল করে চলি তাহলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব আর সেটা সম্ভব খাদ্যভ্যাস নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়ামের মাধ্যমে।
ভূমিকা
ডায়াবেটিস দীর্ঘমেয়াদি রোগ। একেবারে নিরাময় হওয়া সম্ভব নয়। তাই আমাদের সুস্থ থাকতে নিয়মিত সঠিক খাবার খেতে হবে এবং নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। ডায়াবেটিসের ফলে অনেক ধরনের আরো রোগ শরীরে বাসা বাঁধে যে কোন সময় স্ট্রোক করতে পারে, চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর রোগ অবশ্য জীবন যাপনে অলসতা বা বংশগত কারণেও হয়ে থাকে।
ডায়াবেটিকস রোগীদের খাদ্যাভাস যেমন হওয়া উচিত
ডায়াবেটিকস মানেই একেবারে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিতে হবে এমন কোন বিষয় নেই। তবে অবশ্যই নিয়ম মেনে পরিমিত খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এটা একবারে হবেনা আস্তে আস্তে শুরু করতে হবে।
বৈচিত্র্যময় খাবার
প্রতিদিন আমরা যা খাই সেগুলো একই ধরনের খাবার না হয়ে আলাদা আলাদা খাবার হলে ভালো হয়।
একই ধরনের খাবার হলে আমাদের খেতেও ভালো লাগেনা। কখনো ফলমূল, কখনো লাল চালের সামান্য পরিমাণের ভাত বা রুটি খেতে হবে।
যেসব খাবার কমিয়ে দেব
লবণ আমরা সামান্য পরিমাণে খাব। চিনি একেবারেই খাওয়ার চেষ্টা করব না। চর্বি জাতীয় খাবার না খেলে ভালো হয়। যতটুকু না খেলেই নয় সামান্য পরিমাণে খেতে হবে।
সময় মত খাবার খাব
আমরা ঠিক সময় মত খাওয়ার চেষ্টা করব সকালে যে টাইমে খাব প্রতিদিন যেন একই টাইমে খাবার খেতে পারি। সকাল দুপুর রাত তিন বেলাতে পরিমানে কম খেতে হবে। একবারে বেশি বেশি না খেয়ে পরিমাণে অল্প অল্প করে খেতে হবে।
শর্করা যুক্ত খাবার
লাল চালের ভাত, ভুষিযুক্ত আটার রুটি, ভুট্টার খই, খেজুর, যেসব সবজি আঁশযুক্ত হব, ফল এগুলো শর্করা। সময়ে খাবারে শর্করার পরিমাণ বাড়াতে হতে পারে সে ক্ষেত্রে আপনারা এই ধরনের খাবার খেয়ে শর্করা বাড়াতে পারেন। শোষিত শর্করাও আছে যেমন আতপ চাল, সাদা ময়দা, দুধ সর সহ, এই খাবার কম খাবো।
প্রতিদিন আমাদের খাবারে যা থাকবে
- শাকসবজি ও ফলমূল
- লাল চালের ভাত বা লাল চালের রুটি
- দুগ্ধতা খাবার দই থানা ও পনির
- প্রোটিনযুক্ত খাবার মাছ মাংস ডিম ডিমের বিচি ডাল বাদাম
রাতেরখাবার কখন খাবেন
রাতে আমাদের উচিত আটটা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যে খেয়ে নেওয়া।আমরা অনেকেই দশটা বা এগারোটা বাটার উপরে খেয়ে থাকি। এটা একেবারেই ঠিক না। খাবার খাওয়ার পরে যদি সেই খাবার ঠিকমতো হজম না হয় বা শরীরে খরচ না হয় তাহলে ডায়াবেটিস আরো বেড়ে যাবে এবং যাদের ডায়াবেটিকস হয়নি তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। খাবার খাওয়ার পরপরই বা সঙ্গে সঙ্গেই ঘুমিয়ে পড়া উচিত নয় এতে করে শরীরে রক্তে শর্করা বাড়তে থাকে কারণ ক্যালরিগুলো খরচ হওয়ার সুযোগ পায় না। আমাদের খাবার উচিত আটটা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যেও খাবার শেষ করা।
চলুন জেনে নিই রাতের কতটুকু খাবার প্রয়োজন
রাতে আমরা দুইটি রুটি , কিছু পরিমাণ মাছ মাংস এবং রান্না করা সবজি এক কাপ বা একা ডাল খেতে পারি।
লাল চালের ভাত এক কাপ পাঁচমিশালি সবজি একটা ডাল ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম মাছ মাংস।
দুধ খেতে পারি স্বর ছাড়া ২ চামচ ওটস, এর মধ্যে একটি আপেল এবং কলা কুচি করে খেতে পারি।
রাতের খাবারের মসলাযুক্ত কোন খাবার খাওয়া উচিত নয়। বিরিয়ানি খিচুড়ি এ ধরনের খাবার খাওয়া যাবেনা। চর্বিযুক্ত মাংস খাওয়া যাবেনা এবং মাংস তে খুব বেশি পরিমাণে মসলা ব্যবহার করা যাবে না।
যে ধরনের খাবার প্রতিদিন খাবার তালিকায় রাখবো
খেজুর
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খেজুর অত্যন্ত উপকারী কারণ খেজুরে ফাইবার রয়েছে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খেজুরে রয়েছে, এন্টি অক্সিডেন্ট আরও বেশকিছু ফলে আছে আঙ্গুর কমলা লেবু ফুলকপি তবে এগুলোর তুলনায় খেজুরে বেশি রয়েছে। তাই খেজুর আমাদের খেতে হবে।
মটরশুটি
মটরশুঁটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। মটরশুঁটি আমাদের উচ্চ রক্তচাপ জড়িত রোগের ঝুঁকিও কমায় তাই প্রতিদিন ২০০ গ্রামের মতো মটরশুঁটি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীর প্রতিদিন মটরশুটির খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
দুধ
দুধ একটি পুষ্টিকর খাবার। ডায়াবেটিস রোগীদের দুধ খেতে হবে তবে সেটা একদমই সর ছাড়া।
দুধ আপনারা টক দই করেও খেতে পারেন। ফ্যাট অংশটি ছাড়িয়ে দুধ খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
তুলসী
আমরা অনেকেই বলে থাকি তুলসী ডায়াবেটিসের ইনসুলিন। খালি পেটে তুলসী পাতা রস পান করাটা খুবই ভালো। তুলসী পাতার রস পান করলে রক্তে গ্ল মাত্রা কমে যায় এবং ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
তিসি
তিসি আমাদের রক্তে চিনির মাত্রা কমায় ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণ রাখে। আমরা প্রতিদিন দুই গ্লাস পানিতে তিন থেকে চার চামচ তিসির বীজ গুড়া করে মিশিয়ে পান করতে পারি।
হলুদ
হলুদ একটি মসলা, যা আমরা রান্নায় ব্যবহার করে থাকি। হলুদ রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি হৃদরোগ কমাতেও পারে।
শাক সবজি
শাক-সবজিতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি আছে এটা আমরা অনেকেই জানি। শাকসবজি প্রতিদিন খাওয়ার ফলে আমাদের রক্তের শর্করার মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। শাকসবজি হজম শক্তি ও বাড়ায়। পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি খনিজ পাওয়া যায়। প্রতিদিন আমাদের সব রকমের শাকসবজি খেতে হবে।
লেখকের মন্তব্য
ডায়াবেটিস রোগ যেন এখন প্রতি ঘরে ঘরেই হয়ে গেছে। ডায়াবেটিস রোগের কারণে প্রতিদিন অনেক অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। আমাদের উচিত প্রতিদিন খাবারের নিয়ম মেনে খেয়ে এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরকে সুস্থ রাখা। প্রথমত কারো এইভাবে খাওয়ার অভ্যাস থাকবে না এটা স্বাভাবিক তবে আমাদের অভ্যাস করতে হবে নিজেকে সুস্থ রাখতে সুন্দর রাখতে খাদ্যাভাস করা দরকার। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কি ধরনের খাওয়া উচিত এই আর্টিকেলটি পড়লে অবশ্যই জানতে পারবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url