নিম পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা



নিম গাছ কে আয়ুর্বেদিক ঔষুধের গাছের বলা হয়। নিম গাছের প্রত্যেকটি অংশই জাদুগরি কাজ করে। প্রায় ৫ হাজার বছর আগে থেকে নিম গাছের ব্যবহার হয়ে আসছে। নিম গাছকে ঔষুধি গাছ বলা হয়। এই গাছের ফুল, ফল, শিকড়, বাকল কাঠ সবই কাজে লাগে। নিমকাটে কখনো ঘুন, উইপোকা লাগে না।এখন সবকিছুতেই ভেজালের কারণে শরীরে বাসা বাঁধে অনেক ধরনের রোগের। বেশ কিছু রোগে্র ঔষুধের হিসেবে নিম পাতা ব্যবহার হয়ে থাকে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিম পাতার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
নিমপাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা


নিম গাছের সব অংশ কাজে লাগলেও নিম গাছের পাতা আমাদের বেশি উপকারী। চলুন জেনে নেই কি কি উপকার এবং অপকার নিম গাছ এবং পাতা থেকে পাওয়া যায়।

খালি পেটে নিম পাতা খাওয়ার উপকারিতা

খালি পেটে নিম পাতা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। খালি পেটে নিম পাতা খেলে সুগার লেভেল ঠিক রাখতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভরা পেটে নিম পাতা খেলে যে পরিমাণ উপকার পাওয়া যাবে তার চেয়েও বেশি উপকার পাওয়া যাবে খালি পেটে নিম পাতা খেলে।
ভিন্ন ধরনের ঘা পচরা শরীরে দেখা দেয় এগুলো থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য খালি পেটে নিম পাতা খাওয়ার অভ্যাস করাটা বিশেষ প্রয়োজন। এছাড়াও টক্সিন দূর করতে নিমপাতা অনেক গুরুত্ব রাখে টক্সিন এর কারণে অনেকের ব্রণের সমস্যা দেখা দেয় এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে খালি পেটে নিম পাতা খাওয়া বিশেষ প্রয়োজন। মারি ফুলে যাওয়া বা দাঁতের বিভিন্ন সমস্যাতে আমরা নিম নিম গাছের ডাল ব্যবহার করতে পারি।

নিম পাতা ব্যবহারের উপকারিতা

আয়ুর্বেদিক ঔষধ হিসেবে নিম পাতার বিশেষ নাম আছে। নিম গাছের সবংসই অনেক কাজে লাগে। চলুন জেনে নিই নিমপাতা ব্যবহারে কি কি উপকার পেতে পারে।

ত্বক ও চুলের সমস্যায় নিমপাতা

নিম পাতা আমরা ফেসপ্যাক হিসাবে ব্যবহার করে থাকি। কারণ নিমপাতাতে এমন কিছু উপাদান আছে যা আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন ধরনের দাগ সারাতে সাহায্য করে।প্রতিদিন নিমপাতা খাওয়ার ফলে টক্সিন দূর হয় রক্ত পরিশোধের করে যার কারণে ত্বক অনেক ভালো থাকে।নিম পাতাতে রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা খুশকি কমাতে সাহায্য করে। চুলে বৃদ্ধি করতে নিম পাতা খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

হজমের জন্য নিম পাতা

খালি পেটে নিমপাতা খাওয়ার অভ্যাস করলে হজমে সমস্যা দূর করে। টক্সিন দূর করে এবং শরীরের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে নিম পাতা সাহায্য করে।প্রাচীনকাল থেকেই হজমে ঔষধ হিসেবে নিম পাতা বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। প্রতিদিন খালি পেটে নিম পাতা খাওয়ার অভ্যাস করলে যাদের আলসারের সমস্যা আছে এবং পাকস্থলীর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে সে সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারে।

ক্যান্সার প্রতিরোধে নিম পাতার উপকারিতা

প্রতিদিন নিমপাতা চিবানোর অভ্যাস করতে হবে। আমাদের বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার হয়ে থাকে স্তন ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, ফুসফুসে ক্যান্সার, ত্বকের ক্যান্সার আমরা যদি প্রতিদিন খালি পেটে নিমপাতা চিবানোর অভ্যাস করিয়ে সেক্ষেত্রে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যায়। গবেষণা করে দেখা গেছে নিম পাতা ক্যান্সারের প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। শরীরকে সুস্থ রাখতে আগে থেকেই আমরা প্রতিদিন অল্প পরিমাণে খালি পেটে নিম পাতা খাওয়ার অভ্যাস করে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারি।

ডায়াবেটিসের জন্য নিম পাতার উপকার

নিম পাতা রক্তে শর্করার পরিমাণ ঠিক রাখে সেক্ষেত্রে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিমপাতা সাহায্য করে। খালি পেটে বা ভরা পেটে নিম পাতা খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে ডায়াবেটিস রোগীদের খাবারে নিমপাতা রাখা তাদের প্রয়োজন। ডায়াবেটিক রোগীরা নিম পাতা ভাজা খাওয়ার অভ্যাসও করতে পারে। রক্তের বিভিন্ন ধরনের জীবাণুকে মারতেও নিম পাতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কৃমিনাশক

কৃমি সমস্যা শিশুরা বেশি ভুগে থাকেন। সমস্যার কারণে তারা ঠিক মতো খাওয়ার রুচি থাকে না। এক্ষেত্রে নিমপাতা গুঁড়ো করে অল্প পরিমাণে প্রতিদিন খাওয়ার অভ্যাস করার কারণে কৃমির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন এবং খাওয়ার রুচি ফিরে আসবে।

এলার্জির সমস্যা দূর করে

যারা অনেক দিন যাবত এলার্জির সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন দুটি করে নিমপাতা খেতে পারেন। এতে করে বহুদিনের এলার্জি থেকেও মুক্তি পেতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের চর্ম রোগ থেকে মুক্তি পেতে নিম পাতার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।

নিম পাতা ব্যবহারের অপকারিতা

নিম পাতা ব্যবহারের উপকারিতায় বেশি। তবে বেশ কিছু অপকারিতা আছে চলুন জেনে নিই কি অপকারিতা।

১। প্রতিদিন খালি পেটে নিমপাতা ব্যবহারের ফলে অনেকের অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২। অনেকদিন যাবত নিম পাতা খাওয়ার ফলে বমি বমি ভাব ডায়রিয়া হতে পারে।
৩। নিমপাতা বন্ধ্যাতের কারণ ও বলা হয়। তাই যারা সন্তান নিতে যাচ্ছেন নিম পাতা খাওয়া থেকে বিরত  থাকুন।
৪। নিম পাতা অতিরিক্ত ব্যবহার করলে ত্বকে ফুসকরের মত দেখা দিতে পারে।
৫। গর্ভবতী মায়েদের নিম পাতা খাওয়া উচিত নয় এর ফলে গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে।
৬। অনেকদিন যাবত নিম পাতা খাওয়ার ফলে এলার্জির প্রভাব দেখা দেয়।
৭। যারা রক্তচাপে সমস্যায় ভুগছেন নিম পাতা তাদের জন্য নয়।
৮। নিম পাতা বেশি খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।
৯। ছোট বাচ্চাদের নিম তেল খাওয়া বা নিম তেল ব্যবহার থেকে দূরে রাখা ভালো।
১০। শারীরিক সমস্যার কারণে অন্যান্য ওষুধের পাশাপাশি নিম পাতা খেলে অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

উপসংহার

প্রত্যেকটি জিনিসেরই উপকার এবং অপকার দুই আছে। নিম পাতায় উপকারিতা বেশি তবে নিম পাতা ব্যবহারের আগে অবশ্যই অপকারিতা গুলো জেনে নিয়ে ব্যবহার করা ভালো। তাছাড়া গর্ভবতী নারীদের জন্য নিম পাতা এড়িয়ে চলাটা ভালো এছাড়াও ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিম পাতা ব্যবহার করা উচিত। পরিমাণের অধিক ব্যবহার করা কোন কিছুই উচিত নয় নিম তেল বা নিমের যে কোন জিনিস বাচ্চাদের ব্যবহার করার জন্য ডাক্তারের থেকে পরামর্শ নিয়ে করানো উচিত। উপরে আর্টিকেলটি পড়লে অবশ্যই নিমপাতা সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং উপকৃত হবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url