বাড়ির ছাদে শখের বাগানের পরিচর্যা
শহরের ছোট ছোট বাড়ির ভিড়ে চোখের শান্তির জন্য সবুজের প্রয়োজন। সেই সবুজ আমরা শহরে দেখতেই পায় না। তাই নিজের প্রয়োজনের তাগিদেই আমরা নিজ বাড়ির ছাদে বেলকনিতে অনেক ধরনের গাছ লাগাতে পারি।
ঘরের মধ্যে জানালার ধারেও আমরা বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগাতে পারি যেগুলো গাছ সূর্যের আলোছাড়াও বেঁচে থাকে। সেই গাছগুলি আমাদের দেখতেও ভালো লাগবে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে। চলুন আমরা পড়ে নেই কিভাবে বেলকনিতে ছাদে এবং ঘরে ছোট ছোট গাছ লাগিয়ে সবুজের সমারোহ তৈরি করব।
ভুমিকা
গাছ বাড়ির সৌন্দর্যের প্রতীক। বাহিরে বিভিন্ন ধরনের ভেজাল জাতীয় খাদ্য হে অল্প অল্প করে কাজ লাগিয়ে সেগুলো সুন্দর করে পরিচর্যা করে সেখান থেকে কিছু খাবার পেতে পারি যেগুলো হবে ভেজাল মুক্ত।চলুন জেনে নিই আমরা কিভাবে বাড়ির ছাদে গাছ লাগাব এবং সেগুলোর পরিচর্যা করব।
বাড়ির ছাদে শখের বাগান করতে আমাদের অনেকেরই ইচ্ছা করে। জীবনের তাগিদে আমাদের অনেকেই শহরে এসে থাকি। গ্রামের সবুজ সরল সুন্দর গাছপালা কে অনেক মিস করি। আমাদের চোখের শান্তি যেন সবুজে থাকে। শহরের এত দালানকোঠার ভিড়ে চোখ যেন সবুজে আটকে যায়। ছাদে বা বেলকনিতে আমরা অনেক ধরনের গাছ লাগাতে পারি।
ছাদ বাগানে আমরা যেসব গাছ লাগাব ছোট টবে বড় টবে কিম্বা হাফডামে আমরা বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগাতে পারি। ছোট ছোট গাছের জন্য ছোট টব কাজ করে। একটু বড় গাছের জন্য আমরা বড়টা বা ডামের ব্যবস্থা করলে গাছ বেশি বাড়তে পারে এবং ফল বেশি দিতে পারে।
মাটিতে যেমন গাছ তারাতাড়ি বড় হয়, ছাদেও তেমন হয় তবে তার জন্য অনেক যত্ন নিতে হয়। এবং খেয়াল রাখতে হবে গাছ বড় হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা পেয়েছে কিনা, গাছের খাবার ঠিকমত দেওয়া হচ্ছে কিনা।
অনেকেই বাড়ি করার সময় ছাদে দুই পাশে ইট সিমেন্টের গাঁথনি দিয়ে মাঝখানে জায়গাটা ফাঁকা রেখে থাকে গাছ লাগানোর জন্য, এখানে অনেক ধরনের গাছ লাগানো যায় এটা খুব ভালো পদ্ধতি। এতে করে ছাদের বিশেষ ক্ষতিও হয় না কারণ ছাদ থেকে গাথনি টা একটু উপরে থাকে।
টবে টিপসঃ
আমরা ছোট ছোট টবে ছোট ছোট গাছ লাগানোর চেষ্টা করব। বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ আমরা ছোটটবে লাগাতে পারি। তবে আকারের অনুপাতে গাছ লাগাবো এবং তার পরিচর্যা করব। বাজারে যে টপগুলো কিনতে পাওয়া যায় প্রত্যেকটি টবেরি টবের নিচে গোল করে কাটা থাকে। জল বেশি হয়ে গেলে কিংবা গাছের শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য এই ফুটো গুলি অনেক কাজ করে।
অনেক সময় টবে ছোট টবে গাছ লাগানোর পর গাছ অনেক বড় হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে ছোট তরফ থেকে গাছটি আলতোভাবে তুলে আবার লাগাতে পারি। গাছের যেন কোন ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
টবের সার মাটিঃ
ছাদ বাগান করতে হলে দোয়াশ বা বেলে মাটি ব্যবহার করতে হবে। কম্পোস্ট , গোবর সার, রাসায়নিক সার, পচা পাতা এইগুলো মাটিতে ভালোভাবে মেশাতে হবে। তারপর মাটি ঝুরঝুরে করে তবে দিতে হবে, সেই মাটি দিয়ে গাছ লাগালে গাছ অনেক ভালো হয়।
ফুল গাছের পরিচর্যাঃ
ফুল ভালোবাসি না এমন মানুষ পৃথিবীতে কমই আছে। আমরা অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে ফুলের বাগান করে থাকি। আবার অনেকেই জায়গা স্বল্পতার কারণে গাছ লাগাতেই পারি না। তবে অল্প জায়গাতেও গাছের পরিচর্যা করলে গাছ অনেক ভালো হয়।
ছাদে অনেক ধরনের ফুলের গাছ লাগানো যায়। যেমন সূর্যমুখী, বেলি, চাপা, গাদা, গোলাপ, গন্ধরাজ, ক্যামেলিয়া, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা ইত্যাদি। সারা বছরই ফুলের সময় তবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের ফুল হয়।
ফুলের গাছ এমন জায়গায় লাগানো উচিত যেখানে সূর্যের আলো সরাসরি পড়ে। সূর্যের আলো থেকে সব ধরনের গাছই অনেক ধরনের খাবার পায়। , সূর্যের আলো পেলে ফুল গাছ আরো বেশি ফুল দেয়। যে তবে পানি জমে থাকবে সে ধরনের টব আমরা ব্যবহার করব না এতে করে গাছের গোড়া পচে যেতে পারে।
দোআঁশ মাটির সঙ্গে জৈব সার মিশিয়ে প্রস্তুত করুন। গাছ লাগানোর পর ১৫ দিন পর পর গাছের গোড়ার মাটি হালকা করে আলগা করে দিবেন এতে করে আদ্রতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। এবং প্রতিদিন পানি দেওয়ার চেষ্টা করুন । আমরা চেষ্টা করব বাড়ির বাড়ির ছাদগাছে রাসায়নিক সারের চেয়ে বেশি জৈব সার ব্যবহার করার। আমরা বাড়িতেই তৈরি করতে পারি , বাজারে কিনতে পাওয়া যায় তবে সেটা ব্যবহার করাই ভালো করাই ভালো।
প্রতিদিনের ফেলে যাওয়া জিনিস থেকে আমরা জৈব সার বাড়াতে পারি যেমন ডিমের খোসা, চা পাতা, কলার খোসা এবং বিভিন্ন ধরনের তরকারির খোসা। এই সবগুলোকে রাখার জন্য একটি পাত্র নির্বাচন করুন। সেখানে এক মাসের এই খোসাগুলোকে রাখুন সেটা পচে গেলে সেই জল প্রত্যেক গাছের গোড়ায় দেওয়ার চেষ্টা করুন এতে করে গাছের ফুল ভালো হবে গাছের ফল ভালো হবে।
গাছের কোন অংশ শুকিয়ে গেলে সেটা কেটে ফেলে দিবেন খুব সাবধানে পাতা শুকিয়ে গেলে পাতাগুলোকে খুব সাবধানে কেটে ফেলবেন। মাঝে মাঝে গাছে এক ধরনের ছত্রাক দেখা দেয় সেটা নরম কাপড় দিয়ে মুছে ফেলতে পারেন। কোন কোন গাছে অনেক পিপড়া হয় পিপড়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে গাছের চারপাশে সাবানের গুঁড়ো ছিটিয়ে রাখুন।
ছাদ বাগানে ওষুধি গাছের পরিচর্যাঃ
নিয়মিত আমাদের অনেক কাজে ঔষধি গাছের দরকার হয়। সে গাছগুলো আমরা বেলকনিতে বা ছাদ বাগানে করতে পারি। চলুন জেনে নেই কি কি গাছ আমরা ছাদ বাগানে বা বেলকনিতে করতে পারি।
এলোভেরাঃ
অ্যালোভেরার গাছ আমরা অনায়াসেই করতে পারি এটা ঘরের বারান্দায় বেলকনিতে বা জানালার পাশেও হয়ে থাকবে। অ্যালোভেরা গাছকে আমরা ঘৃতকুমারী নামেও পরিচিত। এ গাছের অনেক ঔষধি গুন আছে। কোন স্থানে পুড়ে গেলে অ্যালোভেরা রস আমরা লাগাতে পারি কাটা জায়গার স্থানে। ক্ষত খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় এটা ব্যবহারে। কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করে এছাড়াও নানাবিদ সমস্যা এলোভেরার জুরি নেই। আমরা ত্বকে চুলে বিভিন্ন ভাবে অ্যালোভেরা ব্যবহার করে থাকি।
তুলসীঃ
, তুলসী গাছ বহু পরিচিত গাছ। এর অনেক ওষুধে আমরা অনেকেই জানি। তুলসী গাছের পাতা কান্ড সবকিছুই আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। বাচ্চাদের ঠান্ডা লাগলে আমরা হর হামেশাই তুলসির পাতার রস খাওয়ায়। এই তুলসির পাতা দিয়ে অনেক ধরনের ওষুধ তৈরি হয়। ব্রণের সমস্যা চোখের নিচে কালি দাগ এগুলো দূর করতেও তুলসী গাছের তুলনা হয় না।
লেখক এর মন্তব্য
আমার মতে গাছ যেমন ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, মনেরও শান্তি আনে। বেল কুনিতে আমরা ছোট ছোট গাছ লাগিয়ে আমাদের বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করব। ছাদে আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় ঔষধি গাছ লাগিয়ে ছাদের সৌন্দর্য নিজের চোখের শান্তি ফিরিয়ে আনবো। এই আর্টিকেল পড়ে আপনারা যদি উপকৃত হন তাহলে আমার পেজটি ঘুরে দেখতে পারেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url